বেশিরভাগ ডেভেলপাররাই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার পর ভাবেন, কীভাবে সেই ওয়েবসাইট থেকে আয় করা যায়। আজকের আর্টিকেলে আমি এমন কিছু পদ্ধতির কথা বলবো যেগুলো দ্বারা সহজেই একজন ডেভেলপার তার ওয়েবসাইট থেকে আয় করতে পারবে।

পে পার ক্লিক কন্টেক্সচুয়াল অ্যাড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আয় করতে পারেন:

পে পার ক্লিক অ্যাড নেটওয়ার্কগুলো আপনাকে তখনই আয় করার সুযোগ দেবে যখন আপনার ওয়েবসাইটে কেউ ক্লিক করবে। অর্থাৎ, এক কথায় বলতে গেলে আপনার ওয়েবসাইটের ট্র্যাফিকের জন্য এই ধরণের অ্যাড নেটওয়ার্কগুলো আপনাকে অর্থ প্রদান করবে। বর্তমানে বেশ কিছু ভালো মানের পে পার ক্লিক অ্যাড নেটওয়ার্ক রয়েছে, যাদের মধ্যে –

গুগল অ্যাডসেন্স,

মিডিয়া ডট নেট,

ইনফোলিংকস,

চিতিকা,

পালস ৩৬০ অন্যতম।

সিপিএম অ্যাড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আয় করতে পারেন: পে পার ক্লিকের মতোই এটাও এক ধরণের এড নেটওয়ার্ক সিস্টেম, যদিও এখানে ওয়েবসাইটের ক্লিকের উপর আয় নির্ভর করে না, বরঞ্চ প্রত্যেক পেইজ ভিউয়ের জন্য এখান থেকে আয় করা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রত্যেক ১০০০ ভিউয়ের জন্য এক ডলার পাওয়া যায়।

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, এই ধরনের অ্যাড নেটওয়ার্ক থেকে আয় করার জন্য আপনার ওয়েবসাইটের ভিউয়ের সংখ্যা অনেক বেশি হতে হবে। বর্তমানে বেশ কিছু ভালো মানের সিপিএম অ্যাড নেটওয়ার্ক রয়েছে, যাদের মধ্যে কনভারসেন্ট মিডিয়া, ট্রাইবাল ফিউশন, ক্রাইটেয়ো, ইপম অন্যতম।

সিপিএ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আয় করতে পারেন: এই ধরণের নেটওয়ার্ক মূলত আপনার ওয়েবসাইটের যেকোনো একটি অ্যাকশনের জন্য আপনাকে অর্থ প্রদান করবে। সেই অ্যাকশন হতে পারে ইমেইল দেয়া, সাইন আপ করা, যেকোনো বাটনে ক্লিক করা ইত্যাদি। এই ধরণের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের জন্য সহজেই লিড সংগ্রহ করা যায়। যা মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও কাজে আসে। বর্তমানে বেশ কিছু ভালো মানের সিপিএ নেটওয়ার্ক রয়েছে, যাদের মধ্যে নেভারব্লু মিডিয়া, ক্লিকবুথ, ম্যাক্স বাউন্টি, শেয়ার সেল অন্যতম।

অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আয় করতে পারেন: অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা এই ধরণের নেটওয়ার্ক দ্বারা আয় করার জন্য আপনাকে বিশেষ একটি পণ্যের লিংক সংগ্রহ করতে হবে। সেটিতে নির্দিষ্ট পরিমান বিক্রি জন্য আপনাকে এক ধরণের কমিশন দেয়া হবে। আর এটাই হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। বর্তমানে বেশ কিছু ভালো মানের অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক রয়েছে, যাদের মধ্যে অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েটস, কমিশন জাংকশন, ক্লিক ব্যাংক, স্কিম লিংকস, লিংকশেয়ার অন্যতম।

অ্যাড স্পেস বিক্রি করতে পারেন: জববোর্ডের মতো আপনার ওয়েবসাইটেও আপনি অ্যাডভার্টাইজের জন্য জায়গা বিক্রি করতে পারেন। ওয়েবসাইটের উপরের দিকে কিংবা ফুটারের পাশে অথবা সাইডবারে কিছুটা জায়গা রাখতে পারেন, যেখানে আপনার কাস্টোমারের এড দেয়া হবে। কাস্টোমার তার পণ্যের অ্যাডভার্টাইজ করার জন্য আপনার ওয়েবসাইটের এই জায়গা কিনে আপনাকে অর্থ প্রদান করবে।

পেইড ভিডিও ট্রেইনিং কোর্স চালু করতে পারেন: আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে আপনার ওয়েবসাইটে লেখালেখি করেন কিংবা আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটের ব্লগ সেকশনের জন্য লেখক নিয়োগ দিয়ে থাকেন, তাহলে সেখানে ব্লগের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিডিও কোর্স চালু করতে পারেন। এতে করে সেই ভিডিও কোর্সের প্রিমিয়াম ভার্সনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন।

ইবুক বিক্রি করতে পারেন: আপনার ওয়েবসাইটের ব্লগ সেকশনে আপনার নিজের লেখা বইটি বিক্রি করতে পারেন। অথবা চাইলেই সেই বইটিকে অ্যামাজনে আপলোড করে দিয়ে সেখান থেকেও আয় করতে পারবেন। অ্যামাজন থেকে আপনার বইয়ের জন্য সম্মানী হিসেবে প্রত্যেক দিনে আপনি সর্বোচ্চ ১০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবেন।

ফোরাম তৈরি করুন ও পেইড মেম্বারশিপের ব্যবস্থা রাখুন: আপনার ওয়েবসাইটে যদি ফোরামের ব্যবস্থা থাকে তাহলে সেখানে বিভিন্ন ধরণের মেম্বারশিপের ব্যবস্থা রাখতে পারেন। পেইড মেম্বারশিপের জন্য মাসশেষে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সাবস্ক্রিপশন ফি সংগ্রহ করতে পারেন।

টেক্সট লিংক বিক্রি করতে পারেন: যদিও এই সিস্টেমের মাধ্যমে আয় করাটা উচিত নয়, কারণ এতে ওয়েবসাইট স্প্যামের শিকার হতে পারে। কিন্তু তারপরেও অনেকেই এই পদ্ধতিতে আয় করে থাকেন। এক্ষেত্রে আপনার বিভিন্ন পোস্ট ও বিভিন্ন কন্টেন্টের মধ্যে ক্লায়েন্টের লিংক যুক্ত করে দিবেন। এতে করে ইউজার যখন সেখানে ক্লিক করবে, তখন সেটা ক্লায়েন্টের ওয়েবসাইটে রিডিরেক্ট হয়ে যাবে। বর্তমানে বেশ কিছু ভালো মানের টেক্সট সেলার ওয়েবসাইট রয়েছে, যাদের মধ্যে টেক্সট লিংক ব্রোকারস, ডিজিটাল পয়েন্ট ফোরাম ও ওয়ারিয়র ফোরাম অন্যতম।

নিউজলেটার দ্বারা ইমেইল সংগ্রহ করে আয় করতে পারেন: আপনি নিউজলেটারের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটে ইমেইল সংগ্রহ করতে পারেন। বর্তমানে অনেক কোম্পানিই আছে যারা এসব ইমেইল ক্রয় করে ও পরবর্তীতে এসব ইমেইল অন্যান্য ক্লায়েন্টের আছে বিক্রি করে।

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, গ্রামীনফোন কিংবা বিকাশ অথবা অন্যান্য কোম্পানিকে আপনার ইমেইল না দেয়ার পরেও তারা আপনাকে কীভাবে মেইল করে! তারা আপনাকে মেইল করতে পারে, কারণ আপনি হয়তো এমন কোনো ওয়েবসাইটে আপনার মেইল দিয়েছেন, যেটা পরবর্তীতে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আপনার ওয়েবসাইটেও আপনি ইমেইল বিক্রি করতে পারেন।

স্পন্সরড পোস্ট প্রকাশ করার মাধ্যমে আয় করতে পারেন: নিত্য নতুন অনেক কোম্পানিই আছে যারা আপনার ওয়েবসাইটে তাদের কন্টেন্টগুলো অর্থের বিনিময়ে প্রকাশ করতে বলবে, আর এটাই হচ্ছে স্পন্সরড পোস্টিং। অর্থাৎ, এই পদ্ধতিতে ক্লায়েন্ট আপনার ট্র্যাফিকের উপর নির্ভর করে আপনাকে তাদের যেকোনো একটি কন্টেন্ট পাবলিশ করতে বলবে। আপনি সেটি আপনার ওয়েবসাইটে পাবলিশ করে সেখান থেকেও আয় করতে পারেন।

পণ্যের রিভিউ করার মাধ্যমে আয় করতে পারেন: এই ক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটে ক্লায়েন্টের যেকোনো একটি পণ্যের রিভিউ করবেন। সেই পণ্যের ভালো-মন্দ ও বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আর্টিকেল পোস্ট করবেন। এতে করে ক্লায়েন্ট তার কাঙ্ক্ষিত ইউজার পেয়ে যাবে আর আপনি সেই রিভিউয়ের বদলে অর্থ আয় করতে পারবেন।

তথ্যসূত্র: ইয়ুথ কার্নিভাল